ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আল্লাহর অলি হবেন যেভাবে

নুসরাত জাহান আয়েশা
আল্লাহর অলি হবেন যেভাবে

ওলি আরবি শব্দ। অর্থ অভিভাবক। অধ্যাত্মসাধক বা দরবেশকেও অলি বোঝায়। সুফিরা বলেন, অলি হতে হলে শরিয়ত ও তরিকত ধারায় ব্যুৎপত্তি ও অনুশীলন অপরিহার্য। যথার্থ অলি হচ্ছেন তিনি, শরিয়ত ও তরিকত উভয়ই পালন করে যিনি মারিফত ও হাকিকত লাভ করেন।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ আলেম শাহ হাকিম মুহাম্মদ আখতার (রহ.) আল্লাহর অলি হওয়ার পাঁচ উপায় বর্ণনা করেছেন। তা হলো- এক. গোনাহ ছেড়ে দেওয়া। দুই. গোনাহের উপায়-উপকরণ পরিত্যাগ করা। তিন. সব সময় আল্লাহর জিকির করা। চার. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ। পাঁচ. আল্লাহর অলির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।

এক. গোনাহ ছেড়ে দেওয়া : গুনাহ বা পাপ হচ্ছে শরিয়তের আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করা, নির্দেশ অবহেলা করা ও নিষেধ অমান্য করা। গুনাহ ছোট হোক বা বড় হোক, তা সব সময় বর্জনীয়। গোনাহ ও পাপ হলো অন্ধকারস্বরূপ। যখন মানুষ কোনো পাপ করে, তখন তার অন্তরে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি একপর্যায়ে তা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আর অন্ধকার হৃদয়ে আল্লাহর ভালোবাসা ও জ্যোতি জন্ম নিতে পারে না। তাই আল্লাহর অলি হওয়ার প্রথম শর্ত হলো গুনাহ ত্যাগ করা। আল্লাহ বলেন, ‘আর কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করলে তিনি তাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা নিসা : ১৪)

দুই. গোনাহের উপায়-উপকরণ পরিত্যাগ করা : গোনাহ ও গোনাহের উপকরণ উভয়টি ত্যাগ করা মুমিনদের জন্য ফরজ। গুনাহের উপকরণ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন ব্যক্তি, বিষয়, বস্তু, পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠান, যা মানুষকে আল্লাহর অবাধ্য হতে প্ররোচিত করে অথবা যা কিছু গোনাহের কারণ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। ...এতিম বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুপায় ছাড়া তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না এবং প্রতিশ্রুতি পালন কোরো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি পালন কোরো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩২ ও ৩৪)।

তিন. সব সময় আল্লাহর জিকির করা : জিকির হলো আল্লাহতায়ালার স্মরণ। আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম ইবাদত; কেননা, আল্লাহতায়ালার স্মরণই হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের প্রধান ও অন্যতম লক্ষ্য। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)

জিকির বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। মহান আল্লাহ জিকির নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার ফলাফল তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কোরো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কোরো। তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে অন্ধকার থেকে তোমাদের আলোতে আনার জন্য এবং তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : ৪১-৪৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর স্মরণবিমুখ মানুষদের মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না- তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (বোখারি : ৬৪০৭)

চার. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ : অল্লাহকে পাওয়ার প্রথম শর্ত হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসার পূর্বশর্ত তাঁর সুন্নতের অনুসরণ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করো, তবে তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তাঁদের যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী।’ (সুরা নিসা : ৫৯)

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)

পাঁচ. আল্লাহর অলির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা : বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। মানুষ যখন কোনো আল্লাহর অলি ও নিকটবর্তী বান্দার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, তখন তার ভেতরও আল্লাহর ভালোবাসা প্রবল হয় এবং তার সন্তুষ্টির পথে চলতে থাকে। তাই আল্লাহর অলিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তওবা : ১১৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।’ (বোখারি : ৬৫০২)

আল্লাহ,ইসলাম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত