ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেশের ক্রিকেট বদলে দিতে চান বুলবুল

দেশের ক্রিকেট বদলে দিতে চান বুলবুল

বাংলাদেশের ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার নেতৃত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপে পা রাখে টাইগাররা। আবার দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান তিনি। অবসরের পরও ক্রিকেট ছাড়েননি তিনি। বরং আরও বড় পরিসরে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছেন বুলবুল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা-আইসিসিতে। দায়িত্ব পালন করছেন আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। আইসিসির হাইপারফরম্যান্স কার্যক্রম এবং ট্রেনিং এডুকেশনেরও প্রধান বাংলাদেশের এই তারকা। সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে আগামী মাসে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তার আগেই দেশের ক্রিকেট মেরামতের দায়িত্ব পেয়ে গেলেন সাবেক এই অধিনায়ক।

এত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের অধীনে ক্রিকেট ডেভেলপমেন্টের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমিনুল দেশের বাইরে থাকলেও দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন নিয়ে সব সময় চিন্তা-ভাবনা করেছেন; কিন্তু সাবেক এই অধিনায়ককে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে অবদান রাখতে তেমন কেউ আগ্রহ দেখায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। তার অধীনেও ক্রিকেটে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অনাস্থা দেন ক্রিকেট বোর্ডের ৮ জন পরিচালক। তাদের সেই অনাস্থার জবাবে বৃহস্পতিবার ক্রিকেট বোর্ডে ফারুক আহমেদের পরিচালক পদ প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ফলে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির চেয়ার হারান ফারুক আহমেদ। তার পরিবর্তে গতকাল শুক্রবার সাবেক অধিনায়ক আমিনুলকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয় ক্রীড়া পরিষদ। বিকালে বোর্ড সভায় পরিচালকদের সর্বোচ্চ ভোটে বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত হন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সভাপতির দায়িত্ব বুঝে নিয়ে বিসিবির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। সেখানে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই অল্প সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কী উন্নয়ন করে যেতে চান? জবাবে তিনি বলেন, ‘টেস্ট পাঁচ দিনের খেলা, ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টা। আমি একটা টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে চাই।’

দেশের ক্রিকেটের হাল ধরতে আইসিসির চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরা প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘এখানে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন। এক সময় আইসিসিতে আমার চাকরিটা ছিল পার্মানেন্ট। পরে আমি নিজেই চুক্তিভিত্তিক হয়ে যাই। এর সুবিধা হলো বেতন একটু বেশি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সুযোগ-সুবিধাও বেশি। প্রতি বছর চুক্তিটা পরবর্তী এক বছরের জন্য নবায়ন হয়। এই জুনেই আমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে পরবর্তী এক বছরের জন্য নবায়ন আর করছি না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেব বলে চাকরিটা ছেড়েই এসেছি বলতে পারেন। বর্তমান চুক্তির আর এক মাস মেয়াদ বাকি আছে আমার। আমি আইসিসির সঙ্গে কথা বলেই এখানে এসেছি। চাকরি তো আর কারো জন্য বসে থাকে না। তবে আইসিসি থেকে বলা হয়েছে, আমি যখনই আবার চাকরিতে ফিরতে চাইব, আমাকে তৎক্ষণাৎ নেওয়া হবে। তার আগে আপাতত যে দায়িত্বটা আমাকে দেওয়া হচ্ছে, সেটি মন-প্রাণ দিয়ে করতে চাই। বলা যায়, সব কিছু ছেড়েই আমি এসেছি। দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে চাই।’

বিসিবি সভাপতি হয়ে কী করতে চান? এমন প্রশ্নে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’কে বুলবুল বলেন, ‘আমার প্রধান লক্ষ্য হলো- একটি স্বচ্ছ নির্বাচন দেয়া এবং সেরা ক্রিকেট বোর্ড গঠন করা। এই পর্যন্তই। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় ক্রিকেট উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এর আগে কখনও এই ধরণের দায়িত্বে কাজ করার সুযোগ পাইনি। এবারই প্রথম আমি একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়েছি, আর আমি ‘‘না’’ বলিনি। এতটুকুই।’

সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে কাজের ইচ্ছে প্রকাশ করেন বুলবুল। তবে দীর্ঘমেয়াদে সভাপতি পদে থাকার চান না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সুযোগ এসেছে, আমি কাজ করবো। আপাতত নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের ইচ্ছে। নির্বাচনের পর আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হবে কি না অথবা আমি আইসিসিতে ফিরে যাবো কি না— ভবিষ্যতে কী হবে, তা জানি না। তবে আপাতত নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা আমার নেই। আমি দীর্ঘমেয়াদে এই দায়িত্বে থাকার ইচ্ছাও নেই।’

অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করা আমিনুল আইসিসির চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশে এসেছেন। বিসিবির চাকরিটা অস্থায়ী। সেই হিসেবে পার্জন বন্ধ হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, হ্যাঁ, উপার্জন বন্ধ। কিন্তু পয়সার কথা ভাবলে যুদ্ধে নামা যায় না। তাহলে বিসিবি সভাপতির দায়িত্বকে আপনি ‘যুদ্ধ’ই মনে করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, হ্যাঁ, যুদ্ধই। আগেই বলেছি, দেশের ক্রিকেট গত অনেক বছর ধরে যেভাবে চলছিল, সেভাবে চলতে পারে না। আমি অবাক হয়ে দেখতাম, সেসব নিয়ে কেউ মুখও খুলতো না। তাই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। তবে সন্মান করে ডাকার পর মনে হয়েছে দায়িত্বটি নিয়ে দেখি। যদি কিছুটা বদলানো যায়।

প্রসঙ্গত, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আমিনুলের পদচারণা শুরু আশির দশকের মাঝামাঝি। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন দলের মিডল অর্ডারের ভরসা। একসময়ও নেতৃত্বও পান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পায় দল। পরে নেতৃত্ব হারালেও দেশের অভিষেক টেস্টে করেন স্মরণীয় এক সেঞ্চুরি। ১৩ টেস্ট ও ৩৯ ওয়ানডে খেলে শেষ হয় তার ক্যারিয়ার। ২০০৩ সালে খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে নাম লেখান তিনি। তার কোচিংয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জয় করে আবাহনী লিমিটেড। পরে তিনি পরিবারসহ থিতু হন অস্ট্রেলিয়ায়। নতুন অধ্যায় শুরু হয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। সেখান থেকে পরে আইসিসিতে গত বছর দশেক কাজ করে আসছিলেন ডেভেলপমেন্টের নানা ভূমিকায়।

ক্রিকেট,আমিনুল ইসলাম বুলবুল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত