বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা মানসম্পন্ন প্রবাসী ফুটবলারদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ডেনমার্ক থেকে জামাল ভূঁইয়া এবং ফিনল্যান্ড থেকে তারিক কাজী অনেক আগেই দলভুক্ত হয়ে খেলছেন। সবশেষ গত মার্চে লাল সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয়েছে হামজা দেওয়ান চৌধুরীর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই তারকা ফুটবলের আগমনে নতুন করে জেগে উঠেছে দেশের ফুটবল। যার প্রমাণ মিলেছে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আসন্ন এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ ঘিরে টিকিটপ্রত্যাশীদের উন্মাদনায়। রীতিমতো হাহাকার পড়ে গেছে টিকিট নিয়ে। এবার সেই উন্মাদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন কানাডার সামিত সোম ও ইতালির ফাহমিদুল ইসলামের অন্তর্ভুক্তি। ফাহমিদুলের অবশ্য হামজার সঙ্গেই অভিষেক হতে পারত। তবে সৌদি আরবে অনুশীলন ক্যাম্পে আলো ছড়ালেও এই ইতালিয়ান প্রবাসীকে বাদ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। এ নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা হয়েছিল কোচের। তাকে দলে ফেরানোর জন্য বিক্ষোভ মিছিলও করেছিলেন সমর্থকরা। সেই ফাহমিদুল অবশেষে ফিরলেন জাতীয় দলে। অপরদিকে প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন কানাডা প্রবাসী সামিত সোমও। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে তাকে খেলাতে দ্রুত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিল বাফুফে।
তিনি ক্যাম্পে যোগ দিবেন ৪ জুন। তাই খেলতে পারবেন না ভুটানের বিপক্ষে। দলের সবচেয়ে বড় তারকা হামজা ঢাকা আসবেন ২ বা ৩ জুন। ভুটানের বিপক্ষে তার খেলার সম্ভাবনাও কম।
আগামী ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ আর ১০ জুন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচের জন্য ২৬ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে। ছয় প্রবাসী ফুটবলারকে রেখে গতকাল বুধবার বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ঘোষণা করেছেন প্রাথমিক স্কোয়াড। তাদের মধ্যে সামিত কানাডার কাভারলি এফসির মিডফিল্ডার, হামজা সবশেষ ধারে শেফিল্ড শিল্ডে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলেছেন এবং সেরি ডি’র দল অবলিও কালসিওর ফাহমিদুল ফরোয়ার্ড। সামিত ও হামজার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের মাঝমাঠ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দলগুলোর চেয়ে শক্তিশালী মনে হচ্ছে কাবরেরার। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই (দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে আমাদের মিডফিল্ড সবার সেরা কিনা), তবে দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে আমাদের মাঝমাঠ অবশ্যই দারুণ শক্তিশালী। বিশেষ করে আমাদের গ্রুপে (এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গ্রুপ)। যদি সেরা নাও হই, সম্ভবত খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মিডফিল্ড আমাদের।’
বাংলাদেশ দলের কোচ বলেন, ‘সামিত মানসম্পন্ন মিডফিল্ডার। তবে তার ব্যাপারে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। কেননা, ৪ তারিখে ঢাকায় এসে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সে খুবই অল্প সময় পাচ্ছে। কানাডা থেকে থেকে লম্বা ভ্রমণ করে আসবে, এখানকার কন্ডিশন ভিন্ন, তবে আমরা তাকে নিয়ে ইতিবাচক।’ গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে বাছাইয়ের ম্যাচের আগে সৌদি আরবের ক্যাম্পে ছিলেন ফাহমিদুল। কিন্তু সৌদি থেকে তাকে ইতালি ফিরে যেতে হয় চূড়ান্ত দলে জায়গা না পাওয়ায়। এ নিয়ে তখন বিতর্কও হয়েছিল ঢের। দলের মধ্যে ‘সিন্ডিকেট’ থাকায় ফাহমিদুল উপেক্ষার শিকার হয়েছেন-উঠেছিল এমন তীর্যক অভিযোগও। ফাহমিদুল গতকাল বুধবার সকালে ঢাকায় ফিরে উঠেছেন টিম হোটেলে। ১৮ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড গোলের দাবি মেটাতে পারবেন বলে আশাবাদী কাবরেরা। তিনি বলেন, ‘আমি ফাহমিদুলের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছিলাম। গত মার্চে তাকে ডেকেছিলাম, ক্যাম্পও করেছিল আমাদের সঙ্গে। তার সঙ্গে, তার ক্লাব পরিচালকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলাম। দলের যেটা প্রয়োজন, আমার বিশ্বাস, সেটা মেটানোর সামর্থ্য তার আছে।’
ইংল্যান্ড থেকে হামজার ঢাকায় আসার কথা ২ বা ৩ জুন। গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এই খেলোয়াড়ের। তবে দেশের মাটিতে তাকে ভুটান নাকি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে প্রথম খেলার সুযোগ দেবেন, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন কোচ। কাবরেরা বলেন, ‘হামজার ব্যাপারটা আমি নিশ্চিত করতে পারছি না এখন। তবে সে ফেরার পর আমি চেষ্টা করব, এখানকার আবহাওয়ায় তাকে খেলার অভিজ্ঞতা দেওয়ার। তবে এখনও বিষয়টি আমি চূড়ান্ত করিনি।’
প্রশ্ন ওঠে কিউবা মিচেলকে নিয়েও, সাদারল্যান্ডের যুব দলে খেলা এই তরুণ মিডফিল্ডারের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ছবিও চাউর হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে তাকে নিয়ে তেমন কিছুই বললেন না কাবরেরা। ‘মিচেলের ব্যাপারটা ন্যাশনাল টিমস কমিটি বলতে পারবে। এ ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারে, কেননা, তাদের কাছে সব তথ্য-উপাত্ত আছে। অবশ্যই তার সম্ভাবনা আছে। আমরা তরুণ ও সম্ভাবনাময়দের ডাকব, তবে আমি মনে করি, তাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক ও যত্নবান হওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চলাকালীন ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা মেরে ছয় ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাদ উদ্দিন আছেন প্রাথমিক দল। এই রাইট-ব্যাকের শাস্তি চার ম্যাচে নেমে আসার পেছনে কাবরেরা প্রভাব রেখেছেন বলে গুঞ্জন আছে। এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন কোচ। ‘না, এমন কিছু হয়নি (আমি কোনো প্রভাব রাখিনি)। সে ফিট আছে, আমার কাছে সে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। অবশ্যই সে একটা ভুল করেছে, শাস্তি পেয়েছে। শেখ মোরসালিন কালও গোল করেছে, এর আগের রাউন্ডেও গোল করেছে। আমি বিশ্বাস করি, সেরা পর্যায়ে থেকে সে দলে আসছে। এছাড়া সুমন রেজা অনেক দিন পর ফিরেছে, সে বক্স প্লেয়ার। আশা করি, সে ভালো করবে।’
এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ‘ভালো ফল’ পাওয়ার স্বপ্নও এখন উঁকি দিচ্ছে কাবরেরার চোখে। ভারত ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে ৪০ বছর বয়সী কোচ শোনালেন সিঙ্গাপুর ম্যাচের প্রত্যাশা। ‘নিজেদের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। ভারতে আমরা দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছি। আরও ভালো ফল হতে পারত। জিততেও পারতাম। যদি কমপক্ষে একই মানের খেলা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলতে পারি, তাহলে আমরা ভালো ফল পেতে পারি। তিন পয়েন্ট পেতে পারি। ক্যাম্পে আমরা আট থেকে দশটি ট্রেনিং সেশন করতে পারব। ভুটান ম্যাচে আমি ২৫ জনকে রাখব, সামিতকে ছাড়া। এরপর ২৩ জনের দল চূড়ান্ত করব।’
বাংলাদেশের ২৬ জনের দল : গোলকিপার: মিতুল মারমা, সুজন হোসেন, মেহেদী হাসান শ্রাবণ; ডিফেন্ডার: শাকিল আহাদ তপু, জাহিদ হাসান শান্ত, রহমত মিয়া, ইসা ফয়সাল, তাজউদ্দিন, তারিক কাজী, তপু বর্মণ, সাদউদ্দিন; মিডফিল্ডার: মোহাম্মদ হৃদয়, শাহ কাজিম কিরমানি, সোহেল রানা, মুজিবুর রহমান জনি, শেখ মোরসালিন, জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী, শমিত সোম; ফরোয়ার্ড: ফাহমিদুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, রাকিব হোসেন, ইমন শাহরিয়ার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আল আমিন, সুমন রেজা।
