এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। আইসিসির হয়ে বিভিন্ন দেশে কীভাবে ক্রিকেটের উন্নয়ন করা যায়, সে চেষ্টাই করে গেছেন বছরের পর বছর। এবার তার ভাবনাজুড়ে শুধুই দেশের ক্রিকেট। কারণ, তিনি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি। দেশের ক্রিকেটের হাল ধরার পর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রথম দিন বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে দীর্ঘ সভা করেন তিনি। পরদিন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আমন্ত্রণে তিনি যান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি)।
গতকাল রোববার সৌজন্য সাক্ষাৎ পর্ব শেষ করে বিকালে বিসিবিতে বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে আরেক দফায় বৈঠকে বসেন আমিনুল। এর ফাঁকে অল্প কিছুক্ষণের জন্য তিনি ঘুরে যান বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) থেকে। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাবেক এই অধিনায়ক শোনালেন বিসিবির দায়িত্বে তার ‘ট্রিপল সেঞ্চুরির’ পরিকল্পনার কথা। বোর্ড সভায় শনিবার একটি প্রেজেন্টেশনে নিজের কর্মণ্ডপরিকল্পনা জানান আমিনুল। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতেও একই প্রেজেন্টেশনে বিস্তারিত ধারণা দেন তিনি। যেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ। নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আজকেও আমরা এনএসসিতে ছিলাম, এই বিষয়ে কথা বলেছি। গতকাল বোর্ড সভায় কিছু তালিকা তৈরি করেছি যে আমরা কী করতে চাই। সবাইকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তারা পরিকল্পনা নিয়ে আসবে।
বিসিবি প্রধান বলেন, ‘এখানে আমরা তিনটি কাজ করছি। আমরা বলছি যে ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ করব- শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ। বাংলাদেশে শতভাগ রিচ করব, আমাদের ট্রাস্ট থাকবে, আমাদের প্রোগ্রাম থাকবে। এই ট্রিপল সেঞ্চুরিটা করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড তিনটা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। প্রথমত, ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ আপগ্রেড করব। দ্বিতীয়ত, ‘সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স’, শুধু ক্রিকেটার নয়, কর্মকর্তারাও হাই পারফর্মিং হবেন। তৃতীয়ত, সারা দেশব্যাপী কানেক্ট করব। ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই আঞ্চলিক সংস্থার কাঠামো নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। যেভাবেই হোক, বুরোক্রেটিক হয়ে হোক, আমরা সেটা করব। এনএসসিও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। আইসিসির কাছেও এটা ছিল আমাদের প্রতিশ্রুতি। এখন এটা আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি।’ সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে বুলবুলকে। সেক্ষেত্রে সামনে ভোটে নির্বাচিত সভাপতি আসতে হবে বোর্ডে। নির্বাচনের বিষয়ে বুলবুল বলেছেন, ‘উপদেষ্টা আজ আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছিলেন। আমরা যে কাজগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু এখনও ৪৮ ঘণ্টাও হয়নি। আমরা একটু জেনে এটা নিয়ে বলতে পারব।’
আঞ্চলিক সংস্থার অভাব ও ভবিষ্যৎ কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অভিযোগ করি, যেমন ঢাকায় বসে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর দল বানানো হয়। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, গ্রামের একটা ছেলে যেন ক্রিকেট খেলে উপজেলা, জেলা, বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় দলে আসতে পারে। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ।’ ‘রিজিওনগুলোকে আমরা বোর্ড থেকে কোনো অনুদান দেব না। তাদের পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, কোচ, আম্পায়ার, সুযোগ-সুবিধা; সব মিলিয়ে মূল্যায়ন করে ফান্ডিং দেওয়া হবে। সেই ফান্ডিং মডেলটাও আমরা করে দিচ্ছি।’ প্রতিবন্ধকতা এলেও এগোবেন জানিয়ে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘এটা আমাদের আবশ্যিক চাহিদা। পূরণের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলেও নেব। সবার সমর্থন নিয়েই করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা এলে প্রথমে কেবল ক্রিকেট পৌঁছাব, পরে রিজিওনাল সেন্টার করব। এই মুহূর্তে লক্ষ্য হচ্ছে ‘কানেক্ট অ্যান্ড গ্রো’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তৃণমূলে পৌঁছানো। পরিচালকদের মাধ্যমে, কিন্তু সোজা উপায়ে। বুরোক্রেটিক নয়।’
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে তৃণমূল; বিসিবি সভাপতি বুলবুলের কথাগুলোতেই স্পষ্ট এবার শুধু জাতীয় দলে নয়, সমগ্র কাঠামোতেই পরিবর্তন আনতে চায় বোর্ড। পরিকল্পনা শুধু কথায় নয়, বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা, কাঠামো এবং প্রোগ্রামও হাতে নিয়েছে তারা। আর এই যাত্রার নাম ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’।